ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর রাত আড়াইটে নাগাদ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফকে ফোন করেছিলেন সেনাপ্রধান আসিম মুনির। একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে এমনটাই দাবি করলেন শরিফ। জানালেন, গভীর রাতে মুনিরের ফোন পেয়েই জেগে ওঠেন তিনি। দু’জনের মধ্যে কী কথা হয়েছিল, তা-ও প্রকাশ করেছেন পাক প্রধামন্ত্রী। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, শুক্রবার ইসলামাবাদের পাকিস্তান মনুমেন্টে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে শরিফ সেনাপ্রধানের ফোনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন। বর্ণনা দেন সেই ‘ভয়াবহ’ রাতের।
গত ৬ এবং ৭ মে-র মধ্যবর্তী রাতে পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছিল ভারত। শুরু হয়েছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’। ভারত থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে সেই রাতে ধ্বংস করা হয় একাধিক পাকিস্তানি জঙ্গিঘাঁটি। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, মাত্র ২৩ মিনিট লেগেছিল পাকিস্তানে এই অভিযান চালাতে। আর সেই ২৩ মিনিটেই ঘুম উড়ে যায় শরিফ, মুনিরদের। শরিফ দাবি করেছেন, ৬ তারিখ রাত ঠিক আড়াইটেয় তাঁর কাছে মুনিরের ফোন আসে। ভারতের হামলার কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানান সেনাপ্রধান। কী বলেছিলেন মুনির? শরিফের বক্তব্য অনুযায়ী, মুনির ফোনে বলেন, ‘‘মিস্টার প্রাইম মিনিস্টার, ভারত ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুড়েছে পাকিস্তানের দিকে। আমাকেও পাল্টা হামলার অনুমতি দিন।’’
ফোনেই সেনাপ্রধানকে পাল্টা হামলার অনুমতি দিয়ে দিয়েছিলেন, দাবি পাক প্রধানমন্ত্রীর। পরে ভোরের দিকে পাকিস্তান পাল্টা গোলাবর্ষণ শুরু করে। জম্মু ও কাশ্মীর, রাজস্থান-সহ ভারত-পাক সীমান্তে ড্রোন, মিসাইল ছোড়া হয়। তবে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সেই আক্রমণ সফল ভাবে প্রতিহত করেছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সেনা।
ভারত জানিয়েছিল, পাকিস্তানের কেবল জঙ্গিঘাঁটিগুলিকেই তারা নিশানা করেছে। সাধারণ মানুষের ক্ষতি যথাসম্ভব এড়ানো হয়েছে। তবে পাকিস্তান পাল্টা অভিযোগ করে, ভারত হামলা চালিয়েছে তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে, যাতে অনেক সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শরিফের দাবি, ভারতের এই হামলার পর পাকিস্তান ‘আবশ্যক এবং পরিমিত’ জবাব দিয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পাল্টা অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন বুনিয়ান-আন-মারসুস’, যার অর্থ ‘শিসার তৈরি কঠিন কাঠামো’ বা ‘অভেদ্য দেওয়াল’। ওই দিনের পর থেকে ভারত-পাক সীমান্তে টানা সংঘর্ষ চলেছে। ১০ মে দুই দেশ সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়। আপাতত সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণরেখায় পরিস্থিতি মোটের উপর শান্তিপূর্ণ। তবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি হয়নি এখনও। ভারতের সঙ্গে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন শরিফ। দুই দেশের সামরিক বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশন্স (ডিজিএমও)-এর মধ্যে ‘হটলাইনে’ কথা হয়েছে। সূত্র: আনন্দবাজার