ইসরায়েল পুরো গাজা উপত্যকার ‘নিয়ন্ত্রণে নেবে’ বলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সোমবার মন্তব্য করেন। অন্যদিকে সামরিক বাহিনী যুদ্ধবিধ্বস্ত ওই অঞ্চলে সম্প্রতি কঠোর অভিযান আরো তীব্র করেছে। ইসরায়েলি সেনারা গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস শহর ও আশপাশের এলাকায় ‘অভূতপূর্ব হামলার’ আশঙ্কায় স্থানীয়দের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সেনারা সম্প্রতি হামাসের বিরুদ্ধে বিস্তৃত স্থল অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছে এবং সোমবার বিমান হামলায় কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হয়েছে বলে উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন।
নেতানিয়াহু টেলিগ্রামে দেওয়া একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘লড়াই চলছে তীব্রভাবে এবং আমরা অগ্রগতি করছি। আমরা পুরো গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণে নেব।’
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা হাল ছাড়ব না। কিন্তু সফল হতে হলে এমনভাবে কাজ করতে হবে, যা থামানো যাবে না।
ইসরায়েল এই মাসের শুরুতে বিস্তৃত অভিযানের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে, যা গাজা দখল ও এর জনগণকে স্থানান্তর করার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। পাশাপাশি ইসরায়েল দুই মাস আগে গাজার ওপর আরোপিত সম্পূর্ণ অবরোধ তুলে নিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়েছে।
নেতানিয়াহু আরো বলেন, ‘আমরা গাজার জনগণকে ক্ষুধায় মারা যেতে দিতে পারি না, সেটি বাস্তবিক ও কূটনৈতিক কারণে জরুরি। এমনকি ইসরায়েলের বন্ধু রাষ্ট্ররাও গণহারে ক্ষুধার ছবি সহ্য করবে না।
‘২০ লাখ মানুষ ক্ষুধায়’
অন্যদিকে ইসরায়েল গাজায় সীমিত পরিমাণ সাহায্য পাঠানোর ঘোষণা দেওয়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান মানবিক সংকট নিয়ে কড়া সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, ‘২০ লাখ মানুষ খাদ্যের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে।’
ইসরায়েল ২ মার্চ থেকে গাজায় অবরোধ আরোপ করেছে, যার উদ্দেশ্য হামাসকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা। তবে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা খাবার, পানি, জ্বালানি ও ওষুধের সংকটের বিষয় নিয়ে সতর্ক করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস বলেন, ‘২০ লাখ মানুষ ক্ষুধায় কষ্ট পাচ্ছে, অথচ সীমান্তে কয়েক মিনিটের দূরত্বে টন টন খাবার আটকে আছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মানবিক সাহায্য ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখায় গাজায় ক্ষুধার ঝুঁকি বাড়ছে।
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, ‘অনেক মানুষ ক্ষুধার্ত’ এবং বলেন, ‘আমরা এটা ঠিক করব।’
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের হামলায় এক হাজার ২১৮ জন নিহত হয়, যার বেশির ভাগই সাধারণ নাগরিক। হামাস একই সময়ে ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়, যার মধ্যে ৫৭ জন এখনো গাজায় রয়েছে। তবে ৩৪ জনকে সেনাবাহিনী মৃত বলে ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, যুদ্ধে মোট প্রাণহানির সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫৩ হাজার।