মহাকাশে কন্ডোম ব্যবহার করতেন পুরুষ মহাকাশচারীরা?

মহাকাশে কন্ডোম ব্যবহার করতেন পুরুষ মহাকাশচারীরা

মহাকাশ অভিযানের কথা বলতে গেলে প্রথমেই মনে আসে উচ্চ প্রযুক্তি, নভোশ্চর এবং মহাকাশযানের কথা। মহাকাশ সফরে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ফিরে আসার সুযোগ সকলের হয় না। অনেক মহাকাশচারীকেই দীর্ঘ দিন আটকে থাকতে হয় মহাকাশে।

কিন্তু কেউ কি কখনও ভেবে দেখেছেন যে, নভোশ্চরেরা কী ভাবে প্রস্রাব করেন মহাকাশে? মাটিতে এটি একটি স্বাভাবিক রেচন প্রক্রিয়া। কিন্তু মহাকাশে কোনও মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই, ফলে সমগ্র প্রক্রিয়াটিই খুব জটিল।

১৯৬১ সালের ঘটনা। ওই বছরই মহাকাশে প্রথম মানুষ পাঠিয়েছিল নাসা। অ্যালান শেপার্ড ছিলেন আমেরিকার প্রথম মহাকাশচারী। ঐতিহাসিক মুহূর্তের আগে নাসার হয়ে তাঁর প্রথম মহাকাশ ভ্রমণের আগেই ঘটে এক বিচিত্র ঘটনা।

সে দিন লঞ্চপ্যাডে মহাকাশযানের ভিতর অপেক্ষা করতে করতে নিজের প্যান্ট ভেজাতে বাধ্য হয়েছিলেন অ্যালান। চিরতরে সিক্ত হয়েছিল মানুষের মহাকাশ ছোঁয়ার ইতিহাস। তবে ওই ঘটনার পরই নাসার টনক নড়ে।

মহাকাশযানে মহাকাশচারীদের জন্য শৌচালয় রাখা কতটা জরুরি, তা বুঝতে পারেন বিজ্ঞানীরা। শুরু হয় শৌচালয় নিয়ে ভাবনাচিন্তা।

হাজার হোক বেঁচে থাকার জন্য খাওয়া যতটা জরুরি, শরীরে জমে থাকা আবর্জনা ত্যাগের কাজও তো ততটাই জরুরি। তাই ওই ঘটনার পর থেকেই মহাকাশচারীদের প্রস্রাবের বন্দোবস্ত করার গবেষণায় লেগে পড়েন বিজ্ঞানীরা।

দক্ষিণ ককেসাসে ভারতের ‘প্রলয় নাচন’! সাবেক সোভিয়েত সিপাহীদের হাতে ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র তুলে দেবে নয়াদিল্লি?

নাসার প্রাক্তন মহাকাশচারী রাস্টি শোইকার্ট সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, অতীতে মহাকাশে প্রস্রাব করার জন্য একটি কন্ডোমের মতো বস্তু ব্যবহার করতেন পুরুষ মহাকাশচারীরা।

বস্তুটি বসানো হত পুরুষ নভোশ্চরদের যৌনাঙ্গে। একটি নলের মাধ্যমে প্রস্রাব সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল তাতে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই, এমন অবস্থায় প্রস্রাব সংগ্রহ করার জন্য তৈরি হয়েছিল যন্ত্রটি, যাতে প্রস্রাব মহাকাশযানে ভাসতে না পারে।

একই সঙ্গে ওই বস্তুটিতে থাকত ক্যাথেটার এবং পরিস্রাবণ ব্যবস্থা। নভোশ্চরদের পোশাকে থাকা ব্যাগে প্রস্রাব জমা হত। তাই এর নাম দেওয়া হয়েছিল ‘কন্ডোম ক্যাথেটার’।

কিন্তু পরবর্তীকালে ওই বস্তুর ব্যবহার বন্ধ করে নাসা। সঙ্গে সঙ্গে বিকল্প বন্দোবস্ত করার কথা ভাবে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। কিন্তু কেন?

কন্ডোমের মতো ওই বস্তুটিতে একটি বড় সমস্যা ছিল। সব পুরুষ নভোশ্চরের জন্য উপযুক্ত ছিল না যন্ত্রটি। যে হেতু নভোশ্চরদের পুরুষাঙ্গের আকার সমান নয়, তাই অনেক সময় যন্ত্রটি ফুটো হয়ে যেত। অস্বস্তিতে পড়তেন মহাকাশচারীরা।

এর পরে নাসা বুঝতে পারে যে, ওই যন্ত্র ব্যবহার করতে হলে তা আলাদা করে নভোশ্চরদের পুরুষাঙ্গের মাপে তৈরি করতে হবে। তাই নাসার তরফে মহাকাশচারীদের জন্য ছোট, মাঝারি এবং বড়— তিনটি আকারের ‘কন্ডোম ক্যাথেটার’ তৈরি করা হয়েছিল।

রাস্টি মজা করে জানিয়েছেন, ‘কন্ডোম ক্যাথেটার’ বেছে নিতে বলা হলে মহাকাশচারীরা সবসময় বড় আকারেরই বেছে নিতেন।

তবে এখন আর ‘কন্ডোম ক্যাথেটার’ ব্যবহার করা হয় না। ব্যবস্থা আরও উন্নত হয়েছে। এখনকার যন্ত্রগুলি এমন ভাবেই তৈরি, যা পুরুষ এবং মহিলা উভয় নভোশ্চারীই ব্যবহার করতে পারেন।

পুরনো সেই কন্ডোমের ব্যবহার বন্ধ হলেও রাস্টির কথা শুনে বোঝা যায় যে, মহাকাশ অভিযান শুরুর দিনগুলি কতটা চ্যালেঞ্জের ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *